ABOUT


 হুব্বে রাসূল (দঃ) ও আহলে বাইত (আঃ) চেনানো ও জানানোই আমাদের এই পেইজ ও ম্যাগাজিনের মূল কাজ। 

নবীজীর প্রতি ভালবাসা ঈমানের অঙ্গ। মুমিন মানেই নবীপ্রেমিক। হুব্বে রাসূল না হলে আল্লাহ তথা দিন পরিপূর্ণ হয় না। নবী প্রেম বা হুব্বে রাসূলই ইসলামের মানদণ্ড। কার ভিতরে কতোটুকু ইসলাম আছে সেটা বুঝার মাপকাঠি হলো হুব্বে নবী ও আহলে বাইত। নবী প্রেম তথা হুব্বে রাসূল (দ) ও আহলে বাইত (আঃ) চেনা ও জানার জন্যই আমাদের এই পেইজ ও ম্যাগাজিনের যাত্রা শুরু। আল কুরআনে মহান আল্লাহ পাক নির্দেশ দিয়েছেন- ''বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহ ও তোমাদিগকে ভালবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু।'' সূরাহ আলে ইমরান, আয়াত-৩১ অন্য আয়াতে বর্নিত হয়েছে- ''আর যে কেউ আল্লাহর হুকুম এবং তাঁর রসূলের হুকুম মান্য করবে, তাহলে যাঁদের প্রতি আল্লাহ নেয়ামত দান করেছেন, সে তাঁদের সঙ্গী হবে। তাঁরা হলেন নবী, ছিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিবর্গ। আর তাদের সান্নিধ্যই হল উত্তম।'' সূরাহ আন নিসা, আয়াত-৬৯ হাদিসে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ''যে যাকে ভালবাসে সে তারই সঙ্গী হবে।'' অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে- ''যতক্ষন পর্যন্ত পিতা, সন্তানাদি এমনকি সমস্ত মানুষের চেয়ে আমাকে বেশি ভাল না বাসবে ততক্ষন পর্যন্ত তার ঈমান পরিপূর্ন হবে না।'' সহিহ মুসলিম শরিফের হাদিসে এসেছে- হজরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) সকালে বের হলেন। তাঁর পরনে ছিল কালো নকশি দ্বারা আবৃত একটি পশমি চাদর। হজরত হাসান ইবনে আলী (রা.) এলেন, তিনি তাঁকে চাদরের ভেতর প্রবেশ করিয়ে নিলেন। হজরত হোসাইন ইবনে আলী (রা.) এলেন, তিনিও চাদরের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়লেন। হজরত ফাতিমা (রা.) এলেন, তাকেও ভেতরে ঢুকিয়ে ফেললেন। তারপর হজরত আলী (রা.) এলেন তাকেও ভেতরে ঢুকিয়ে নিলেন। তারপর বললেন (সূরা আহযাবের ৩৩ নম্বর আয়াত পাঠ করলেন)- হে আহলে বাইত! আল্লাহতায়ালা তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে দূর করে তোমাদের পবিত্র করতে চান। আহলে বাইতকে ভালোবাসা আল্লাহর হুকুম সূরা শুরার ২৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, আল্লাহ তাঁর ইমানদার ও সৎকর্মশীল বান্দাদের জান্নাতের এই সুসংবাদই দিয়ে থাকেন। হে আমার হাবিব (সা.) আপনি বলুন, আমি তোমাদের আল্লাহর পথে ডাকার জন্য তোমাদের কাছে নিকটাত্মীয়দের প্রতি ভালো ব্যবহার ছাড়া কোনো প্রতিদান চাই না। কেউ কোনো ভালো কাজ করলে আমি তার জন্য তাতে কল্যাণ বাড়িয়ে দেই। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, প্রতিদান দানকারী। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেছেন, যখন এ আয়াত নাজিল হল তখন সাহাবারা (রা.) জিজ্ঞেস করলেন- ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা.) কারা আপনার নিকটাত্মীয়? যাদের মুয়াদ্দাত (আনুগত্যপূর্ণ ভালোবাসা) পবিত্র কোরআনে উম্মতের ওপর ফরজ করা হয়েছে। উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, হজরত আলী (রা.), হজরত ফাতেমা (রা.), হজরত হাসান ও হোসাইন (রা.)-এর মুয়াদ্দাত (আনুগত্য)। (যুরকানি আলাল মাওয়াহীব, দুররে মানসুর, সাওয়ায়িকে মুহরিকা, আশরাফ আলী থানভি (র.) লেখা কোরআন শরিফ, তাফসিরে মাজহারি, তাফসিরে নুরুল কোরআন ও মাদারেজুন নবুয়াতসহ আরও বহু কিতাবে এসেছে)। * হজরত ইমাম শাফি (র.) বলেন, হে রাসূলের পরিবারবর্গ, আপনাদের ভালোবাসা আল্লাহর পক্ষ থেকে ফরজ করা হয়েছে, সেই কোরআনে যা তিনি নাজিল করেছেন। আপনাদের মর্যাদার জন্য এটুকু যথেষ্ট, যে ব্যক্তি আপনাদের ওপর সালাত পাঠ করে না, তার নামাজ পরিপূর্ণ হয় না। (দিওয়ান)। ইমাম আবু জাফর তাহাবি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘সব মুমিন করুণাময় আল্লাহর বন্ধু। তাঁদের মধ্য থেকে যে যত বেশি আল্লাহর অনুগত ও কুরআনের অনুসরণকারী, সে তত বেশি আল্লাহর কাছে সম্মানিত অর্থাৎ তত বেশি বেলায়েতের অধিকারী। (ইবনুল মুবারক) হাদিসে পাকে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার দুটি উপায় ওঠে এসেছে। একজন মুমিনের কাজকে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই ভাগে বিভক্ত করেছেন। তাহলো-- প্রথমত : বান্দা আল্লাহর ফরজ বিধানগুলো যথাযথ পালন করবে।- দ্বিতীয়ত : ফরজ বিধান পালনের পাশাপাশি নফল ইবাদত-বন্দেগিতে আত্মনিয়োগের মাধ্যমে বেলায়েত তথা আল্লাহর বন্ধুত্ব অর্জন করবে। যারা আল্লাহর ওলি বা বন্ধু। তাদের মর্যাদাও অনেক বেশি। কেননা যে ব্যক্তি আল্লাহর বন্ধু হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলাও ওই ব্যক্তির হয়ে যায় বলে ব্যাপক প্রচলিত একটি প্রবাদ বাক্য রয়েছে। হাদিসে কুদসিতে এসেছে-‘যে ব্যক্তি আমার কোনো ওলির সাথে শত্রুতা করে আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করি। আমার নৈটক্য অর্জন বা ওলি হওয়ার জন্য বান্দা যত কাজ করে তন্মধ্যে সে কাজ আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি; যে কাজ আমি ফরজ করেছি। অর্থাৎ ফরজ কাজ পালন করাই আমার নৈকট্য অর্জনের জন্য সর্ব প্রথম ও সবচেয়ে প্রিয় কাজ।এরপর বান্দা যখন সর্বদা নফল ইবাদত পালনের মাধ্যমে আমার বেলায়েতের পথে অগ্রসর হতে থাকে তখন আমি তাকে ভালোবাসি। আর যখন আমি তাকে ভালোবাসি তখন আমি তার কানে পরিণত হই, যা দিয়ে সে শুনতে পায়; আমি তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখতে পায়; আমি তার হাত হয়ে যাই, যা দ্বারা সে ধরে বা আঘাত করে এবং আমি তার পা হয়ে যাই, যা দ্বারা সে হাঁটে।সে যদি আমার কাছে কিছু প্রার্থনা করে তাহলে আমি অবশ্যই তাকে তা প্রদান করি। সে যদি আমার কাছে আশ্রয় চায় তাহলে আমি অবশ্যই তাকে আশ্রয় প্রদান করি।’ (মুয়াত্তা মালেক) পরিশেষেআল্লাহ তাআলার বন্ধু হতে ফরজ বিধান পালনের নির্দেশনা মেনে কাজ করা জরুরি। যেমনটি একাধিক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন-- ‘নিশ্চয়ই তোমাদের ওলি হলেন আল্লাহ এবং তাঁর রসুল আর ঈমানদার লোকেরা; যারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, জাকাত আদায় করে এবং আল্লাহর প্রতি অনুগত বাধ্যগত থাকে। যারা ওলি মানে আল্লাহকে এবং আল্লাহর রসুলকে আর ঈমানদার লোকদেরকে, তারাই আল্লাহর দল এবং আল্লাহর দলই থাকবে বিজয়ী। (সুরা মায়েদা : আয়াত ৫৫-৫৬)- ‘আর আল্লাহ মুমিনদের অভিভাবক।‘ (সরা ইমরান : আয়াত ৬৮ )- ‘আর আল্লাহ মুত্তাকিদের (তাকওয়াবানদের) বন্ধু।’ (সুরা জাসিয়া : আয়াত ১৯)- ‘তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই ব্যক্তিই বেশি মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে বেশি মুত্তাকি (তাকওয়াবান)।’ (সুরা হুজরাত : আয়াত ১৩) আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ঈমান ও তাকওয়া অবলম্বনের পাশাপাশি ফরজ বিধানগুলো পালনের পাশাপাশি সাধ্যমত নফল ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর বন্ধু হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন। 

No comments

Powered by Blogger.